গরুর জাত পরিচিতি:
হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান (সংক্ষেপে : ল্যাটিন আমেরিকাতে হলস্টাইন এবং ইউরোপ ও এশিয়া আফ্রিকা তে ফ্রিজিয়ান ডাকা হয়)। বিশ্বের সবচে বেশি দুধ উৎপাদনকারী গাভী এবং বিশ্বের মোট উৎপাদিত দুধের প্রায় ৬০-৭০% হলস্টাইন থেকে উৎপাদিত হয় এবং এটাকে মূলত সিঙ্গেল পারপাস (শুধু দুধ উৎপাদন) গরু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু
উৎস দেশ:
নেদারল্যান্ড এর নর্থ হল্যান্ড এবং ফিরিসল্যান্ড প্রদেশ এবং আংশিকভাবে জার্মানি তে।
গড় ওজন:
ষাঁড় : ৭০০-১০০০ কেজি।
গাভী : ৬০০-৮০০ কেজি।
মোট সংখ্যা:
পৃথিবীতে হলস্টাইন এবং এটা হতে সৃষ্ট জাট সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়না, তবে ১৯৯০ সালে শুধুমাত্র আমেরিকাতে এর সংখ্যা ছিল ৪০ মিলিয়ন এর বেশি।
ইতিহাস:
নেদারল্যান্ড হলস্টাইন গরুর ইতিহাস প্রায় ২০০০ বছরের। পরবর্তীতে (সঠিক সময় জানা যায়না) বাভারিয়া (জার্মানি) থেকে কালো জাতের গরু এবং ফিরিসল্যান্ড (নেদারল্যান্ড) এর সাদা জাতের গরুর ক্রস এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় যুগান্তকারী এক নতুন কালো সাদা ব্রীড এর যার দুধ উৎপাদন ক্ষমতা সবাইকে চমকে দেয়, যার নাম দেয়া হয় হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান। পৃথিবীতে এখনো পিওর ফ্রিজিয়ান গরু পাওয়া গেলেও নতুন ক্রস ব্রীড দ্রুত গতিতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে।
১৮৫২ : আমেরিকা তে হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরুর আমদানি।
১৮৮৫ : আমেরিকাল হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ব্রিডিং এসোসিয়েশন গঠন।
১৮৮৬ : অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন একটা হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় এবং ছয়টা গাভী আমদানি করা হয় যেখানে এখন অস্ট্রেলিয়ার ৭০% দুধ উৎপাদন হয় এই জাত থেকে।
১৯৪৬ : যুক্তরাজ্যে হলস্টাইন ব্রিডিং এসোসিয়েশন গঠন, যদিও আঠারো শতকে সেখানে এই জাতের গরু আমদানি করা হয়।
পালনকারী দেশ:
ল্যাটিন আমেরিকা থেকে নিউজিল্যান্ড, অল্যাস্কা থেকে জাপান এরকম পৃথিবীর এমন কোনো গরু পালনকারী ভূখণ্ড নাই যেখানে কালো সাদা ব্র্যান্ডিং হয় নাই। তবে সর্বোচ্চ সংখ্যা পালনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইংল্যান্ড, কেনিয়া।
বৈশিষ্ট ও সুবিধা:
হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান তাদের সাদা কালো রং তাদেরকে সহজেই সেনার উপায় করে দিয়েছে। একটা হলস্টাইন পূর্ণ বয়স্ক গভীর ওজন ৮০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ১১০০ কেজি পর্যন্ত হয় এবং উচ্চতা ৫৫- ৭০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। একটা হলস্টাইন গভীর বাছুর এর ওজন ৪০ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়। পৃথিবীরsorboccho দুধ উৎপাদনের যত রেকর্ড সবই এই সাদা কালো বাহিনীর দখলে এবং মাংসের বাজারেও তাদের সরব উপস্থিতি। মূলত সাদা কালো হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা এটা বিভিন্ন রঙের গরুর সাথে ক্রস মাদ্ধমে বিভিন্ন রং ও বৈশিষ্ঠের হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরু দেখা যায়।
দুধ উৎপাদন:
এক ল্যাক্টেশন পিরিয়ড এ হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান অ্যাভারেজ ৯০০০ থেকে ১২০০০ কেজি দুধ দেয় এবং দুধ উত্পাদনকাল ৩০০-৩১০ দিন।
দুধের গুনাগুন:
মিল্ক ফ্যাট ৩.৮ থেকে ৪.৮ এবং মিল্ক প্রোটিন ২.৮ থেকে ৩.৭ এবং ল্যাক্টোজ ৩.৭ থেকে ৫.৩ ( ডাচ হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, জাত ভেদে পরিবর্তন হতে পারে)।
জীবনকাল:
এই জাতের গরু সাধারণত অ্যাভারেজ ৭-৮ বছর নিয়মিত দুধ দেয় যদিও দুধ উৎপাদনের ৪ থেকে ৫ বছর পর থেকে দুধ উৎপাদন কমতে থাকে । উৎপাদনের তৃতীয় এবং চতুর্থ বছর সর্বোচ্চ দুধ দেয়।
- গরুর জাত পরিচিতি : হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু
- গরুর জাত পরিচিতি : ব্রাহমা জাতের গরু
- গরুর জাত পরিচিতি : কংকরেজ /কংক্রেজ
মাংস উৎপাদন:
মাংস উৎপাদন এই জাতের গরু পালনের মূল উদ্দেশ্য না হলেও মাংসের বাজারে রয়েছে ফ্রিজিয়ান এর বহুল উপস্থিতি কারণ পৃথিবীর মোট গরু পালনের ৫০% এর উপরে শুধু এই জাত পালন করা হয়। হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান ষাঁড় সাইজে বেশ বড় হওয়ায় মাংস উৎপাদন ও সন্তোষজনক, যে কারণে এটা ডুয়াল পারপাস (মাংস ও গরু) গরু না হয়েও এটা অলিখিত ডুয়াল পারপাস গরু।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
কেন্দ্রিক অর্থনীতির চালিকাশক্তি হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, কারণ ভালো জাতের গরু না হলে দুধ উৎপাদনে কোনোভাবেই লাভবান হওয়া সম্ভব না। এছাড়া ষাঁড়ের সাইজও বড় হওয়ায় মাংস কেন্দ্রিক অর্থনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে এই জাতের গরু।
হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান পালনে সমস্যা:
পৃথিবীর প্রধান দুধ উৎপাদনকারী জাত হলেও এই জাতের রয়েছে কিছু সমস্যা যেটা অনেক খামারি কাটিয়ে উঠতে পারেনা। যার একটা সমস্যা হলো প্রজনন সমস্যা। হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরু প্রায়াস প্রজনন অক্ষম হয়ে পরে। তাছাড়া প্রজননে দুর্বল হওয়ায় গড়ে ৪ স্ট্রও দরকার হয় যা বেশিরভাগ গরুর ক্ষেত্রে আরো কম। এছাড়া এই জাতের গরু স্বাস্থ্যের বেলায় বেশ অনুভূতিশীল। মাস্টাসিস এবং এফ এম ডি এই জাতের গরুর ২ তা প্রধান স্বাস্থ সমস্যা। এছাড়া নতুন আবহাওয়া তে মানিয়ে নিতে দীর্ঘ সময় লাগে। খাবার এবং রক্ষনাবেক্ষন খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে এই জাতের গরু থেকে লাভ তুলতে পারেনা।
(আমার জাত পরিচিতি সিরিজটি অভিজ্ঞ ও সফল খামারি মুক্তি মাহমুদ ভাই এর ইংলিশ এর সিরিজ এর অনুকরণ, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন।)
লেখার সোর্সঃ জাহিদুল ইসলাম (এডমিন, পিডিএফ)
ফেসবুকে আমরাঃ >>>ফলো করুন<<<
ইউটিউবে আমরাঃ >>>সাবস্ক্রাইব করুন<<<
আমি ডাঃ শ্রাবণ হাসান সজল
একজন ভেটেরিনারিয়ান,তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষিত সমাজকে লাইভস্টক সেক্টরে কাজ করতে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা করছি।সেই লক্ষ্যে ফেসবুক,ইউটিউব এবং ব্লগ সাইটের মাধ্যমে ফার্মারদের নানাবিধ পরামর্শ প্রদান করতে চেষ্টা করি।ইতোমধ্যে আমার ইউটিউব চ্যানেল ১ লক্ষাধিক সাবস্ক্রাইব অর্জন করায় ইউটিউব থেকে চ্যানেলটি ভেরিফাইড হয়েছে।