প্রিয় খামারি বন্ধুরা আজ আমি আলোচনা করব গাভীর ওলান ফোলা রোগের চিকিৎসা ভেষজ চিকিৎসা নিয়ে। গাভির ওলান ফোলা রোগ বা ম্যাস্টাইটিস রোগ হচ্ছে ডেইরি খামারিদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ একটা রোগ। কেননা, এই ওলান ফোলা রোগে গাভীর দুধের বাট তথা ওলান নষ্ট হয়ে যায় এবং এতে খামারি চরমভাবে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন। কারণ, ডেইরি খামারের অন্যতম আয়ের উৎস এবং প্রতিদিনকার খরচের একমাত্র যোগান দাতা হচ্ছে দুধ। তাই ওলান ফোলা রোগ হলে দুধের উৎপাদন কমে যায় বা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় বলে ওলান ফোলা রোগ কে গাভীর অর্থনৈতিক দৈন্যতা বললেও ভুল হবে না।
সাধারণত গাভির ওলান ফোলা রোগ তীব্রতার দিক থেকে ৩ টি পর্যায়ের হয়ে থাকে । যদি রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তবে চিকিৎসা করে ভাল করা সম্ভব। আর তীব্র পর্যায়ের হলে সেক্ষেত্রে আমাদের গাভিটি বিক্রি করে বা জবাই করে দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ সামনে থাকে না।
গাভীর ওলান ফোলা রোগের চিকিৎসাঃ
সাধারণত আমাদের দেশে গাভির ওলান ফোলা রোগের জন্য গতানুগতিক চিকিৎসা আমরা নিয়ে থাকি। তাতে আমরা কখনো কখনো হয়ত সুফল পাই আবার কখনো হয়তো বা সমাধান পাই না। কিন্তু আমরা চাইলের ভেটেরিনারি চিকিৎসার পাশাপাশি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভেষজ চিকিৎসা বাড়িতে বসেই করতে পারি। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গাভির ওলান ফোলা রোগের চিকিৎসায় প্রাকৃতিক এই ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
কাজেই, আজ এই পর্বে আমি আপনাদের জানাব, কিভাবে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে কোনো ধরনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই গাভীর ওলান ফোলা বা গাভীর ম্যাস্টাইটিস রোগের ভেষজ চিকিৎসা করা উপায়।
গাভীর ম্যাস্টাইটিস বা ওলান ফোলা রোগে প্রাকৃতিক ভেষজ চিকিৎসা:
তো চলুন দেখে নিই কি কি উপাদান লাগবে এবং কিভাবে ভেষজ ঔষধ তৈরি করতে হবে এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
উপাদান সমূহঃ
- ১। এলোভেরা – ২৫০ গ্রাম।
- ২। হলুদ গুড়া – ৫০ গ্রাম।
- ৩। লাইম ( ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ) – ১৫ গ্রাম।
- গরু ছাগলের জন্য হজমি পাউডার নিজেই বানিয়ে ফেলুন
- প্রাণি চিকিৎসায় হারবাল ঔষধ হিসেবে হলুদের অনন্য ব্যবহার
- গরুর খামারে রোগ নিরাময়ে তুলসী পাতার ব্যবহার
- গবাদিপশুর ঘা বা ক্ষত নিরাময়ে ভেষজ চিকিৎসা
- গরু ও বাছুরের ডায়রিয়া বা উদারাময়ের ভেষজ চিকিৎসা
- গরু ছাগলের পক্স ও আঁচিল রোগের প্রাকৃতিক ভেষজ চিকিৎসা
পেষ্ট প্রস্তুত প্রণালীঃ
- উপরোক্ত অনুপাতে এলোভেরা, হলুদ গুড়া ও লাইম ( ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ) একসাথে একটা ব্লেন্ডারে নিয়ে ভাল করে ব্লেন্ডিং করতে হবে। এতে লালচে রঙয়ের একটা পেষ্ট তৈরি হবে।
- যতটুকু দরকার সেই প্রয়োজন অনুযায়ী উপরোক্ত অনুপাতে পেষ্ট তৈরি করে নিতে হবে।
- প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজনীয় পেষ্ট প্রতিদিনই তৈরি করতে হবে। একদিন বেশী করে তৈরি করে অনেকদিন ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিদিনের তৈরিকৃত পেষ্ট প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতিঃ
- প্রথমে আক্রান্ত গাভির ওলান ভালকরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- এরপরে গাভীর সকল বাট তথা কোয়াটারের ( আক্রান্ত এবং সুস্থ সকল বাটের ) দুধ ভাল করে দোহন করে ফেলতে হবে।
- এরপর এক মুষ্ঠি তৈরিকৃত পেষ্টের সাথে ১৫০ – ২০০ মিলি পানি মিশিয়ে পাতলা পেষ্ট বানাতে হবে।
- তৈরিকৃত পেষ্ট গাভীর ওলানের বাট সহ ওলানের সমস্ত জায়গায় হাত দিয়ে আলতো করে মাখিয়ে দিতে হবে।
- এভাবে দিনে ৮ – ১০ বার প্রলেপ দিতে হবে একটানা ৫ দিন।
- প্রতিদিনের শেষের বারের প্রলেপ দেয়ার জন্য যে পেষ্ট তৈরি করবেন, সেটায় ১৫০ – ২০০ মিলি পানি মেশানোর পরিবর্তে ১৫০ – ২০০ মিলি সরিষার তেল মিশিয়ে প্রলেপ দিবেন। এভাবে ৫ দিন প্রলেপ দিলে গাভির ওলান ফোলা রোগ টি সহসাই সেরে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
আশা করছি আমার আজকের লেখা টি দেশের প্রান্তিক ডেইরি খামারি ও সাধারন গাভির খামারিদের জন্য কিছুটা হলেও সুফল বয়ে আনবে।
আমি ডাঃ শ্রাবণ হাসান সজল, নতুন কিছু জানার চেষ্টায় ছুটে চলেছি; নতুন কিছু আপনাদের জানানোর চেষ্টায় এই ওয়েবসাইট এবং ভিডিও পরামর্শ দেয়ার উদ্দেশ্যে ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত আপডেট দেয়ার চেষ্টা করি।
আমার লেখা ভাল লাগলে অবশ্যই লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করুন এবং আমার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন।
<<< সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন >>>
আমার লেখাগুলো এবং ভিডিও এর নিয়মিত আপডেট পেতে আমার ফেসবুক পেজটি ও লাইক করতে পারেনঃ
<<< আমার ফেসবুক পেজ >>>
আমি ডাঃ শ্রাবণ হাসান সজল
একজন ভেটেরিনারিয়ান,তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষিত সমাজকে লাইভস্টক সেক্টরে কাজ করতে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা করছি।সেই লক্ষ্যে ফেসবুক,ইউটিউব এবং ব্লগ সাইটের মাধ্যমে ফার্মারদের নানাবিধ পরামর্শ প্রদান করতে চেষ্টা করি।ইতোমধ্যে আমার ইউটিউব চ্যানেল ১ লক্ষাধিক সাবস্ক্রাইব অর্জন করায় ইউটিউব থেকে চ্যানেলটি ভেরিফাইড হয়েছে।