আজকে আমরা আলোচনা করব- ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে। সাথে জানাব এই রোগের কারন ,রোগ ছড়ানোর উপায়,রোগের প্রতিরোধ কিভাবে করব।পিপিআর ছাগলের একটি মারাত্মক এবং বর্তমান কালের আলোচিত সংক্রামক রোগ। এজন্য এ রোগটিকে ছাগলের প্লেগ রোগ বলা হয়। সম্পতি আমাদের দেশে ছাগলের এ রোগ মারাত্মক আকারে হচ্ছে। প্রতি বছর এ রোগে অনেক ছাগল মারা যায়।
রোগের কারণঃ
এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ, যা মরবিলি নামক ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে।
কিভাবে এ রোগ ছড়ায়ঃ
- রোগ জীবাণু সরাসরি সুস্থ ছাগলের সংস্পর্শে আসতে পারে।
- এ রোগে আক্রান্ত অসুস্থ ছাগলের নাকের শ্লেষ্মার মাধ্যমে এ রোগ অন্য ছাগলে ছড়াতে পারে।
ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
রোগের লক্ষণঃ
- আক্রান্ত ছাগলের শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
- নাক দিয়ে প্রচুর তরল পদার্থ নির্গত হয় এবং নাসারন্ধে সর্দি লেগে থাকে।
- মুখের চারিদিকে ও দাঁতের গোড়ায় ক্ষত সৃষ্টি হয়।
- ছাগলের পায়খানা স্বাভাবিকভাবে গুটি গুটি হয়ে থাকে; কিন্তু পি পি আর রোগে আক্রান্ত ছাগলের পায়খানা গরুর পায়খানার মত ল্যাদা ল্যাদা হয়ে যায় এবং কিছুদিন পরে প্রচুর ডায়রিয়া হয়।
- খাবারের অরুচি হয়।
- গর্ভবতী ছাগলের গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।
- শ্বাস কষ্ট দেখা যায় এবং কাশি হয়।
- চোখ একটু লাল দেখায়।
- নিউমোনিয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়।
- পানি ছাড়া কিছু খায় না সাধারণত।
- বেঁচে থাকলে ছাগল অনেকদিন নিউমোনিয়ায় ভোগে।
ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা
রোগ নির্ণয়ঃ
- খামারের অনেক ছাগল আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস জেনে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
- পিপি আর এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণঃ জ্বর, নাক ও চোখ দিয়ে প্রচুর শ্লেষ্মা ও তরল পদার্থ বের হওয়া, পাতলা পায়খান ও ডায়রিয়া, শ্বাস কষ্ট এবং মুখে ও দাঁতের গোড়ায় ক্ষত দেখে সহজেই এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
- ছাগল পালনে বিস্তারিত তথ্য
- বিভিন্ন বয়সী ছাগলের খাদ্য তৈরির তালিকা
- সহজ পদ্ধতিতে খাশি মোটাতাজাকরণ
- ছাগলের আদর্শ দানাদার খাদ্য তৈরির উপায়
- হাইব্রীড জাম্বো ঘাস চাষ পদ্ধতি
- হাইব্রীড নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি
রোগের চিকিৎসাঃ
সাধারণত ভাইরাস জনিত রোগের কোনো কার্যকরী সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। যেহেতু ছাগলের পিপি আর রোগ টি ভাইরাস জনিত রোগ ,কাজেই এ রোগের কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই।
তবে ,
- দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রামণ থেকে রক্ষা করতে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দিতে হবে।
- ঠান্ডার সমস্যার জন্য এন্টি-হিস্টামিন জাতীয় ইঞ্জেকশন দিতে হবে।
- ডায়রিয়ার সমস্যার জন্য সালফার ড্রাগ দেয়া যেতে পারে।
- ডায়রিয়ার কারনে সৃষ্ট ডি-হাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা রোধে স্যালাইন দিতে হবে।
তবে মনে রাখতে হবে যে, এসকল ঔষধ অবশ্যই একজন ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় আপনার সামান্য ভুলের কারণে ছাগল মারা যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধঃ
- যেহেতু পি পি আর একটি ভাইরাসজনিত রোগ তাই এর চিকিৎসা নেই। এজন্যই আপনাকে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে যে, আমার ছাগলে যেন পি পি আর রোগ না হয়।
- এবং সে জন্য আপনাকে ছাগলের পি পি আর ভ্যাকসিন দিতে হবে। পি পি আর ভ্যাকসিন প্রতি বছরে মাত্র একবার প্রতি ছাগলে ১ মিলি করে ছাগলের চামড়ার নিচে দিতে হয়।
- আর যদি কোনো ভাবে ছাগল পি পি আর রোগে আক্রান্ত হয়েই যায়। তবে, আক্রান্ত ছাগলকে সুস্থ ছাগল থেকে সাথে সাথে আলাদা করে রাখতে হবে।
- ছাগলকে ছড়ানো বা ছেড়ে দেয়া নিষিদ্ধ করতে হবে।
- আক্রান্ত ছাগলের ব্যবহৃত জিনিস পত্র অন্য সুস্থ ছাগলে ব্যবহার করা যাবে না।
- খামারের বা ছাগলের গরের মেঝে এবং ঘরের চারিদিকে নিয়মিত জীবাণু নাশক দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ছাগল পালনের বিস্তারিত জানতে আমাদের ভিডিও প্রতিবেদন দেখুন ইউটিউবেঃ এখানে ক্লিক করুন
আমি ডাঃ শ্রাবণ হাসান সজল
একজন ভেটেরিনারিয়ান,তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষিত সমাজকে লাইভস্টক সেক্টরে কাজ করতে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা করছি।সেই লক্ষ্যে ফেসবুক,ইউটিউব এবং ব্লগ সাইটের মাধ্যমে ফার্মারদের নানাবিধ পরামর্শ প্রদান করতে চেষ্টা করি।ইতোমধ্যে আমার ইউটিউব চ্যানেল ১ লক্ষাধিক সাবস্ক্রাইব অর্জন করায় ইউটিউব থেকে চ্যানেলটি ভেরিফাইড হয়েছে।
1 thought on “ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধ”