কোয়েল খামারের বায়োসিকিউরিটি বা জৈবনিরাপত্তা
যেকোনো খামারের সাফল্যের পিছনে বায়োসিকিউরিটি বা জৈব-নিরাপত্তা বিশেষ ভূমিকা রাখে।কারন জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে খামারে রোগ-বালাই হওয়ার প্রবণতা কম থাকে।তাই সঠিকভাবে খামারের বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখতে পারলে খামার করে সফল হওয়া খুবই সম্ভব।
খামার প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে বাচ্চা সংগ্রহ,বাচ্চা লালন-পালন এবং উতপাদন ও বিক্রয় পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে বায়োসিকিউরিটি মেনে চলতে হবে।
আসুন কোয়েল খামারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল জৈব-নিরাপত্তা গুলো জেনে নিই-
ঘর প্রস্তুতের ক্ষেত্রেঃ
- খামার ঘরটি যথাসম্ভব বসতবাড়ি থেকে দূরে হওয়া উচিত। তবে বাসার ছাদে করলে ও সমস্যা নেই।
- একটি খামার থেকে অন্য একটি খামারের দূরত্ব কমপক্ষে ১০০ মিটার হওয়া উচিত।
- খামার ঘরটি অবশ্যই পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা হতে হবে।
- ঘরের উত্তর ও দক্ষিণ দিক খোলা রাখতে হবে।
- খামারের আশে-পাশে কোনো জলাশয় বা ডোবা থাকা উচিত নয়।
- ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা।
- খামারে প্রবেশের পথে (দরজার সামনে) একটি ফুটবাথ তৈরি করা।ফুটবাথ হচ্ছে খামারের প্রবেশ পথে একটি ছোট বাথ ট্যাব বা কুয়ার মত পাকা করে তৈরি করা।এবং সেখানে সবসময় জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি পূর্ণ থাকবে।যখন কেউ খামারে প্রবেশ করবে তখন যেন সে তার পা এই পানিতে ডুবিয়ে তারপরে খামারে প্রবেশ করে।এতে খামারি বা দর্শণার্থীর পায়ের সাহায্যে খামারে কোনো জীবাণু প্রবেশ করতে পারবে না।
দর্শণার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেঃ
- খামারে বিনা প্রয়োজনে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত না।এতে যেকোনো সময় জীবাণুর আক্রমন হতে পারে।অনেক সময় ভদ্রতার খাতিরে আমরা বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন্দের খামারে ঢুকতে দেই।কিন্তু এটা খামারের জৈব-নিরাপত্তার ক্ষেত্রে করা উচিত নয়।
- যদি বিশেষ কাউকে ঢুকতে দিতে হয় তবে ঢোকার আগে অবশ্যই তাকে ভালভাবে জীবাণু নাশক স্প্রে করে নিতে হবে।ফুটবাথে পা ডুবিয়ে তারপরে খামারে ঢুকাতে হবে।
- বেশি ভাল হয় যদি খামারে কাজ করার জন্য আলাদা পোশাক থাকলে ভাল।যখন কেউ খামারে প্রবেশ করবে তখন সেই পোশাক পড়ে প্রবেশ করবে।এবং এই পোশাক গুলা নিয়মিত জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।
বাচ্চা ছাড়ার আগে ঘর জীবানুমুক্তকরণঃ
- খামারে বাচ্চা আনার আগে খামার টি ভালকরে ডিটারজেন্ট বা জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে ভাল করে শুকিয়ে তারপরে বাচ্চা আনতে হবে।
- ঘরের মেঝেতে ব্যবহৃত লিটারর উপরে জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিতে হবে।
খাবার ও পানির পাত্র জীবানুমুক্তকরণঃ
- বাচ্চা আনার আগেই খাবার ও পানির পাত্র গুলা জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
- এরপরে পাত্র গুলা ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
বাচ্চা পরিবহনের ক্ষেত্রেঃ
- বাচ্চা পরিবহন করার জন্য সে খাঁচা ব্যবহার করবেন সেগুলা আগে থেকেই ভাল করে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে তারপরে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
- সম্ভব হলে যে পরিবহনে সে স্থানে করে নিয়ে আসবেন সেখানে ও জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিন।
সারাবছর জুড়েঃ
- প্রতিদিন খামারের খাবার ও পানির পাত্র পরিস্কার করতে হবে।
- পাত্রের তলায় পড়ে থাকা ময়লাযুক্ত খাবার সরিয়ে নইতে হবে।
- পরিস্কার ও জিবাণুমুক্ত পানি সরবারাহ করতে হবে।
- প্রতি ২-৩ দিন অন্তর অন্তর খামারের চারিপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।
- যেসকল জীবাণুনাশক গুলা পাখির ক্ষতি করে না এমন জীবাণুনাশক দিয়ে খামারের ভিতরে ও মাঝে মাঝে স্প্রে করা ভাল।
- প্রতি সপ্তাহে প্রয়োজনে একাধিক বার লিটারের উপরের ময়লা পরিস্কার করা উচিত।
এছাড়া খামারে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি নিয়মিত জীবানুমুক্ত রাখা উচিত।
আমি ডাঃ শ্রাবণ হাসান সজল
একজন ভেটেরিনারিয়ান,তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষিত সমাজকে লাইভস্টক সেক্টরে কাজ করতে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা করছি।সেই লক্ষ্যে ফেসবুক,ইউটিউব এবং ব্লগ সাইটের মাধ্যমে ফার্মারদের নানাবিধ পরামর্শ প্রদান করতে চেষ্টা করি।ইতোমধ্যে আমার ইউটিউব চ্যানেল ১ লক্ষাধিক সাবস্ক্রাইব অর্জন করায় ইউটিউব থেকে চ্যানেলটি ভেরিফাইড হয়েছে।